Visitor Review
Visitor Review

আমি থাকার জায়গা নিয়ে চট করে মুগ্ধ হইনা, এই জীবনে যে কয়টা জায়গায় ঘুরতে গিয়ে থেকেছি, কোনোটাই এভাবে ছুঁয়ে যায়নি।  মানুষের ঘরবাড়ি  Manusher Ghorbari আমায় মুগ্ধ করেছে, ঋদ্ধ করেছে। Homestay কথাটার সঠিক অর্থ এনারা সযত্নে লালন করে চলেছেন। 

আমি একাই গিয়েছিলাম, আদিগন্ত সবুজ ধান মাঠের মাঝখানে পাকা রাস্তার ধারে অনেক যত্নে এই বাগানবাড়ি টি গড়ে তুলেছেন অনিকেত স্যার এবং শাহানা ম্যাম। এক কোণে বৃষ্টির দিনগুলো তে একটুকরো ঘরে তাড়িয়ে তাড়িয়ে একাকিত্ব টা উপভোগ করেছি, জানলা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা ধান ক্ষেতের উপর দিয়ে বাতাসের ঢেউ খেলে যাওয়া দেখেছি। এইরকম একটা জায়গায় থাকতে পাওয়া টাই সবচেয়ে বড় আজকের দিন এ দাঁড়িয়ে, সারা দেশটাই তো এখন মানুষের জঙ্গল। অর্নব এর গানের কথায় 'গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক, পায়ে পায়ে হারাবার জায়গা খুঁজে মরি'।

কিন্তু এ জায়গা স্থির স্থবির অচল নয়, বিনোদন এর সব রকম ব্যবস্থা বিদ্যমান। বার্বিকিউ এর ব্যবস্থা আছে, পুকুরে মাছ ধরা, নিজে হাতে পুকুরে নাও চালানো, বসার জন্য ক্ষেতের ধরে অসাধারণ সুন্দর একটা উঁচু করে বাঁধা মাচা, খরগোশ, হাঁস, দেশি মুরগি, গোয়ালে গরু, কি নেই! আর সবাই মিলে যদি এক সন্ধ্যেবেলায় একটা সিনেমা দেখতে চান, তার জন্য আছে প্রজেক্টর এর ব্যবস্থা ও।

খাওয়াদাওয়ার দিকটাও খুব যত্ন করে খেয়াল রাখেন তাঁরা, ঘরের খাবার, স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু, পরিবেশন করেন পেতলের থালা বাটি আর গ্লাস এ। সাথে থাকে গোয়ালের গরুর দুধ থেকে বানানো গাওয়া ঘী। আসলে খাওয়ার অধিকাংশ কাঁচামাল ই এই বাগানবাড়ীতে চাষ করা হয়, সবকিছু একেবারে টাটকা, organic. এঁদের ক্ষেতের গবিন্দভোগ চাল এর খিচুড়ি এখনো মুখে লেগে আছে। তবে কেউ চাইলে দেশি মুরগী, খরগোশ এর মাংস পেতে পারেন। আর সবচেয়ে ভালো লাগল তাদের স্নেহময় ব্যবহার। ঠাণ্ডা চোখের বকায় একটু জোর করে খাওয়ান, সবাই মিলে যেভাবে সঙ্গ দিলেন, এ ভোলার নয়। 

আমি ভোর বেলায় বেরিয়ে এলাম, বুকে ভরে নিয়ে এলাম অনেক ভালো স্মৃতি, ব্যাগ এ ভরে আনলাম তাঁদের দেওয়া গামছা, দুটো বিশাল কাগজী লেবু আর গবিন্দভোগ চাল। আলো ফোটার সময় বিদায় নিলাম না, কারণ চলে যাইনি, আবার ফিরে আসার জন্য গেলাম শুধুমাত্র। অনিকেত স্যার, শাহানা ম্যাম, রাজকুমারবাবু, রান্নার দিদিমণি এবং বাকি সবাইকে আমার অনেক শুভেচ্ছা রইল।

Kaushik Chowdhury